ডিজিটাল সময় চলছে বিশ্বজুড়ে। ইন্টারনেটের আওতায় আসছে প্রায় সবকিছুই। সেই সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে ইন্টারনেট ভিত্তিক বিজনেস, বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান! গত এক যুগেরও বেশী সময় ধরে বাংলাদেশে ই-কমার্সের প্রসার ঘটছে, সেই সাথে সৃষ্টি হচ্ছে বিপুল কর্মসংস্থান। শুরুতে গতিটা অনেক ধীর হলেও সময়ের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে এই ক্ষেত্রে দক্ষ জনবলের চাহিদা তৈরী হয়েছে, এবং প্রতিদিনই এই চাহিদা বেড়ে চলেছে।
আমাদের অনেকেই আছেন যারা ই-কমার্স কিংবা অনলাইন বাণিজ্যের সাথে কোনোভাবেই সরাসরি সম্পৃক্ত নই। কিন্তু কোনো না কোনো ভাবে সবাই ই-কমার্সের প্রসার ও প্রচারে প্রভাব রাখছেন। এই প্রভাবকে সরাসরি এনে সাধারন কিছু দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আমরা চাইলে এই বিপুল সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রে নিজেদের ক্যারিয়ার গঠনে সহজ সুযোগ লাভ করতে পারি।
বেকারত্বের হতাশার বানী তো সবাই শোনায়, কিন্তু দক্ষতাগুলো কাজে লাগিয়ে এই হতাশাকে শক্তিতে রুপান্তরের কাব্য কজনই বা লিখতে পারে? হ্যা, মূল ব্যাপারটা কিন্তু ঐটাই – নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগানো।
সেরা কিন্তু সাধারণ কিছু দক্ষতা নিয়ে এখানে লিখছি, যেগুলো আপনাকে দিতে পারে দারুণ ক্যারিয়ার গঠনের সহজ সুযোগ।
ক্রিয়েটিভ ডিজাইনিং ভালো বুঝেন?
আপনার জন্য শত শত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অপেক্ষায় আছে, থাকবে। আপনার যদি ডিজাইন সেন্স থাকে, সেই সাথে থাকে ডিজাইনিং টুলস গুলো নিয়ে খেলা করার কিছুটা সক্ষমতা, আপনার কাজের ক্ষেত্র কেবল বাংলাদেশ নয়; বরং সারা বিশ্বে আপনি হতে পারেন খুব কদর পাওয়াদের একজন। ফ্রিল্যান্সিং মানেই অনেকে কেবল লোগো ডিজাইন বা ফটোশপ-ইলাস্ট্রেটরকেই বুঝে থাকেন এখনো। কিন্তু পাওয়ার-পয়েন্টে দারুণ সব ডিজাইন করা যায়, এনিমেশন করা যায়, লোগো করা যায়, সেটাই বা কজন জানি? আপনার ডিজাইনের মাথা থাকলে সেটাকে শাণিত করুন, এগিয়ে যেতে সময় লাগবে না! বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ভেতরের কথা যদি বলতে যাই – সৃজনশীল ডিজাইনার পেতে বড্ড বেগ পেতে হয় এখনো! সুযোগটা কাজে লাগান, দিন বদলে যাবে।
আপনার ডিজাইনের মাথা থাকলে সেটাকে শাণিত করুন, এগিয়ে যেতে সময় লাগবে না! বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ভেতরের কথা যদি বলতে যাই – সৃজনশীল ডিজাইনার পেতে বড্ড বেগ পেতে হয় এখনো! সুযোগটা কাজে লাগান, দিন বদলে যাবে।
ছোটবেলা থেকেই কথা বলায় অনেক পটু?
ই-কমার্স ট্র্যাকে মার্কেটিং অনেক বড় একটা প্রভাব বিস্তার করে আছে। বিজনেস টু বিজনেস মার্কেটিং-এর পাশাপাশি ক্লায়েন্ট ম্যানেজমেন্ট, ইস্যুর সমাধান এবং পারসোনাল মার্কেটিং আপনাকে দেখাতে পারে সফল হবার দারুণ এক পথ। কল সেন্টার ম্যানেজমেন্ট কিংবা বিক্রয়োত্তর সেবা খাতে আপনাকেই খুঁজে নিতে পারে ইকমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো! প্রয়োজন কেবল নিজেকে উপস্থাপন করা, আর ভেতরের আমিত্বকে বাইরে বের করে আনা। প্রফেশনালিজমের সাথে এই দক্ষতাকে মিলিয়ে সামনে এগিয়ে আসুন, পেছনে ফেরার সময় বা আগ্রহ কোনোটাই পাবেন না!
ইদানিং বেশীর ভাগ ইকমার্সেই প্রচুর ইন্টার্ন (অন-জব ট্রেইনি ইন্টার্ন) নিচ্ছে। এই পজিশনগুলোতে ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা সহজেই জায়গা করে নিতে পারেন যদি কথা বলার পাশাপাশি বেসিক কিছু স্কিল দেখাতে পারেন। লেখালেখি, এক্সেল, স্মার্টলি কথা বলা এসব স্কিলের মধ্যে অত্যন্ত প্রভাবশালী।
লিখতে পারেন ভালো? শব্দ-খেলা আপনাকে আনন্দ দেয়?
তাহলে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন – প্রোডাক্ট কন্টেন্ট, কপিরাইটিং, ব্লগিং বা ব্লগ মার্কেটিং-এ আপনি অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবেন। দরকার কেবল সঠিক প্ল্যাটফরমটি বেছে নেয়া। নিজের লেখার ধার দিয়ে কেটে ফেলতে পারবেন অজস্র বাঁধা। আপনার নিজস্ব কাজ বা বিজনেসের পাশাপাশি অনায়াসে শব্দ নিয়ে খেলা করে আনতে পারেন সাফল্যের আনন্দ।
ব্লগিং করে আয় করার অনেক সুযোগ আছে, আছে পত্রিকা-ম্যাগাজিনে লেখার ভালো ভালো সুযোগ। অনলাইন কন্টেন্ট মার্কেটিং-এ দেরীতে হলেও এদেশে এর কদর বাড়ছে, এবং বাড়তেই থাকবে!
ই-কমার্সের প্রসারের সাথে সাথে এই লেখার গুরুত্ব বাড়ছে প্রতিনিয়ত! অনেকের ধারণা লেখার দক্ষতা লাগে কেবল কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট বিভাগে, কিন্তু না – এর ব্যাপকতা আরো অনেকটা জুড়ে ছড়ানো! দু’তিনটা শব্দ কিংবা এক লাইনের শিরোনাম যেখানে সোসাল মার্কেটিং-এর কোনো ক্যাম্পেইনে টেনে আনতে পারে কয়েক গুণ বেশী আগ্রহী চোখ, সেখানে শব্দের গুরুত্ব বোঝাটা কঠিন হবার কথা নয়!
ইংরেজিতে ভালো?
আপনার জন্য কাজের দুয়ার একটু বেশীই খোলা। ওয়েব কন্টেন্ট, সোসাল মিডিয়া কমিউনিটি ও ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ব্লগিং, প্রোডাক্ট কন্টেন্ট – এমন সব বিশেষায়িত ক্ষেত্রে নিজেকে অনন্য পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবেন খুব সহজেই। বাংলায় দক্ষতা আপনাকে দিবে দুর্দান্ত গতি। দরকার কেবল আপনার দুটো পদক্ষেপ – এগিয়ে আসুন ই-কমার্সে, মেলে ধরুন নিজেকে। সময়ই আপনাকে আপনার সামনে উপস্থাপন করবে, নতুন কোনো এক সফল ব্যক্তিত্ব হিসেবে!
ডিজিটাল জগতে গণমানুষের আচরণ বা রিএকশন ধরতে পারেন?
আপনি সময় দিন ডিজিটাল মার্কেটিং-এ। নিজেকে আরো শিক্ষিত হবার সময় দিন এই কাজে। ইংরেজিতে দক্ষতা থাকলে এই ক্ষেত্রে পাবেন সহজ সফলতা। নাহলে দক্ষতা বাড়িয়ে নিন, এগিয়ে যাবেন অনেকদূর। দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে আগ্রহের সাথে এগিয়ে চলে খুব অল্প সময়ে দেশের সেরা ডিজিটাল মার্কেটার হবার অহরহ উদাহরণ আমাদের চারপাশেই রয়েছে। তাদের লেখাগুলো পড়ুন, তাদের সাথে কথা বলুন। দেখবেন নিজেকে অনেক বেশী সাহসী আর উপযুক্ত মনে হচ্ছে। তারপর – কেবলই এগিয়ে চলার গল্প, লিখবেন নিজের হাতেই।
আরো অনেক স্কিল আছে যেগুলো আপনাকে দারুণ সব ক্যারিয়ার সম্ভাবনার সামনে শক্তভাবে দাড় করাতে পারে। কিন্তু আমি টেকনিক্যাল কোনো দক্ষতা নিয়ে বলতে চাইনি, বলেছি কেবল সাধারণ কিছু দক্ষতাগুলো নিয়ে – যেগুলো আমাদের স্বাভাবিক শিক্ষা জীবনেই আমাদের অনেকের মাঝে দানা বেঁধে থাকে। হয়তো আমরা নিজেরাই সেগুলোর দিয়ে নজর দেয়ার সময় বা প্রয়োজনটা উপলব্ধি করতে সক্ষম হই না। কিন্তু, এমন সাধারণ স্কিলগুলো কাজে লাগিয়েই যে নিজেকে ক্যারিয়ারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য করে তোলা সম্ভব হয়, এমন উদাহরণ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আমার চারপাশেই!
স্কিল নেই? কিংবা, নিজেকে বুঝতে পারছেন না! সমস্যা নেই।
নিজেকে নিয়ে ভাবুন। কী করতে ভালো লাগে আর কি করে আপনি আনন্দ পান – সেটার সাথে কেবল বাজারে দক্ষতার চাহিদাকে মেলাতে চেষ্টা করুন। আলোচনা করুন সফল ব্যাক্তিদের সাথে, সোসাল লিডারদের সাথে, ভালো দিক-নির্দেশনা পাবেন খুব সহজেই। মোটিভেশন দিয়ে আনন্দ পান এমন মানুষের সাথে আলাপ করুন। নিজেকে চেনার নতুন দিগন্ত পাবেন।

ক্যারিয়ার এইড প্রো ফেসবুক কমিউনিটিতে প্রায়শই নিজেদের ক্যারিয়ার এবং স্কিল নিয়ে সেশন, কন্সালটেন্সি কিংবা মেন্টরিং-এর আয়োজন করা হয়। কমিউনিটিতে একটিভ থেকে এসব সেশনে নিজে মেলে ধরে নিজের জন্য সেরাটা বুঝে নিন এক্সপার্ট রিসোর্সগণের কাছ থেকে। এখানের সবচাইতে বড় সুবিধা হলো, অনেক সিনিয়র রিসোর্সগণের কাছ থেকে নিঃস্বার্থ সাপোর্ট, যা ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে বড্ড বেশীই দরকার।
অপেক্ষাকৃত কম দক্ষতাগুলোকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ আর পড়াশুনা দিয়ে ধার দিয়ে নিন। তারপর মাঠে নেমে যান। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপের সুযোগ বাড়ছে, সেগুলোকে ধরে ফেলুন। পারিশ্রমিক নিয়ে ভাববেন না, সেটা দক্ষতার সাথে সাথে আপনা-আপনিই বেড়ে যাবে।

অপেক্ষাকৃত কম দক্ষতাগুলোকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ আর পড়াশুনা দিয়ে ধার দিয়ে নিন। তারপর মাঠে নেমে যান। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপের সুযোগ বাড়ছে, সেগুলোকে ধরে ফেলুন। পারিশ্রমিক নিয়ে ভাববেন না, সেটা দক্ষতার সাথে সাথে আপনা-আপনিই বেড়ে যাবে।
দারাজ, পিকাবু, মোনার্ক মার্ট কিংবা চালডাল -এর মতো ই-কমার্স জায়ান্টগুলো কেবল শিক্ষাগত যোগ্যতাকেই মূল্যায়ণ করে না, দেখতে চায় আপনার ভেতরে শক্তিটাকেও। যেদিকে আপনার দক্ষতার বাড়ন্তি কিছুটা বেশী, সেদিকেই আপনাকে দক্ষতা প্রমাণ করার সুযোগ দিয়ে থাকে ভালো প্রতিষ্ঠানগুলো।
শেখার আসলে কোনো বয়স নেই, শেখারও কোনো শেষ থাকতে নেই। নিজেকে চেনার চেষ্টা করুন। ইকমার্স খাতে আপনার জন্য আছে অনেক ক্ষেত্র। কেবল আগ্রহ নিয়ে সঠিক পদক্ষেপটা নেয়াই বাকি। তারপরের গল্প হয়তো আপনি নিজেই লিখে জানাবেন আমাদের। আমরা উৎসাহ ভরে পড়বো একজন সফল মানুষের ক্যারিয়ারের পেছনের কথাগুলো!
লেখকঃ
Mridha Md. Saiful Islam
Founder Admin
Career Aid Pro